Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

খাদ্যের পুষ্টি ও নিরাপদতা

প্রফেসর ড. মোঃ আব্দুল আলীম

খাদ্য সকলেরই খেতে হয় হোক সে রাজনীতিবিদ, ব্যাংকার, ব্যবসায়ী, ডাক্তার অথবা ইঞ্জিনিয়ার। সুস্থ ও সবলভাবে বেঁচে থাকার জন্য নিরাপদ খাদ্য গ্রহণ একান্ত প্রয়োজন। তাই খাদ্যের উপাদান সম্পর্কে সকলেরই কিছু না কিছু সাধারণ জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। উন্নত দেশের প্রতিটি নাগরিক কোনো না কোনোভাবে যেমন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা বা কমিউনিটির শিক্ষার মাধ্যমে খাদ্যের পুষ্টি উপাদান, খাদ্যের নিরাপদতা বিষয়ে সাধারণ জ্ঞান অর্জন করে থাকে। আমাদের দেশে সকলেরই বিশেষ করে মহিলাদের খাদ্যের পুষ্টি ও নিরাপদতা সম্পর্কে জানা একান্ত প্রয়োজন। কারণ মহিলারাই আমাদের দেশে ছেলে মেয়েদেরকে লালন পালন করে থাকেন।


খাদ্যের উৎস, উৎপাদন ও পুষ্টি
প্রাথমিকভাবে খাদ্যের যোগান আসে কৃষি, প্রাণিসম্পদ ও মৎস্য সম্পদ থেকে। এ দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রায় কৃষি, প্রাণিসম্পদ ও মৎস্য সম্পদের ভ‚মিকা অপরিসীম। নানা প্রতিক‚লতার মাঝে এবং বিগত বছরগুলোতে গবেষণায় উদ্ভাবিত নতুন নতুন জাত ও উৎপাদন প্রদ্ধতির প্রযুক্তিসমূহ কৃষক বা খামারিদের মাঝে পৌঁছে দেয়ার ফলে দৃশ্যমান ফসল, প্রাণি ও মৎস্য উৎপাদন বেড়েছে বহুগুণ। খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তার মাত্রা প্রশংসনীয়ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। কৃষির সকল শাখা (কৃষি, প্রাণিসম্পদ ও মৎস্য সম্পদ) উন্নয়নের রোলমডেল হিসেবে বাংলাদেশ বিশে^র দরবারে স্বীকৃতি পেয়েছে।


খাদ্যের উপাদান প্রধানত : ছয়টি যথা- পানি, কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফ্যাট, ভিটামিন ও মিনারেলস। এই ছয়টি উপাদানকে আবার দুই ভাগে ভাগ করা যায় যথা : ম্যাক্রো নিউট্রিয়েন্ট (কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন ও ফ্যাট) ও মাইক্রো নিউট্রিয়েন্ট (ভিটামিন ও মিনারেলস)। আমাদের দেশে এখন ম্যাক্রো নিউট্রিয়েন্টের আর অভাব নেই। আমাদের দেশে এখন মাইক্রো নিউট্রিয়েন্টের যথেষ্ট অভাব রয়েছে। আর মাইক্রো নিউট্রিয়েন্টের উৎস হচ্ছে শাকসবজি। তাই দৈনন্দিন জীবনে প্রতিদিনই আমাদের পর্যাপ্ত পরিমাণ শাকসবজি ও ফলমূল খাওয়া দরকার। এখানে উল্লেখ্য যে, শাকসবজি ও ফলমূল ফরমালিন আছে বলেই অনেকে সেগুলো কম খেয়ে থাকেন। কিন্তু আমি এখানে তাদেরকে নিশ্চিত করে বলতে চাই শাকসবজি ও ফলমূলে ফরমালিন দেওয়া হয় না বা ফরমালিন শাকসবজি ও ফলমূলের উপর কোনোভাবে কাজ করে না। তাই, এটি একটি ভুল ধারণা। পর্যাপ্ত পরিমাণ শাকসবজি ও ফলমূল খেতে হবে যা আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ করে থাকে। করোনাকালীন সময়ে ডবিøউএইচও এবং ডাক্তারদের নির্দেশনা অনুসারে পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রোটিন, ভিটামিন এ, ভিটামিন ডি ও ভিটামিন সি খাওয়া দরকার। এই নিউট্রিয়েন্টগুলো আমাদের করোনার হাত থেকে নিরাপদ রাখবে।   


খাদ্যের নিরাপদতা
খাদ্য নিরাপদতা হলো এক বা একাধিক পদক্ষেপ যা ভোক্তার স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য খাদ্যকে খাদ্যের বিভিন্ন বিপত্তি থেকে রক্ষা করে। খাদ্যকে দূষিত করতে পারে তথা মানবস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক খাদ্য স্থিত যে কোনো কিছুকে খাদ্য বিপত্তি বলা হয়। এক্ষেত্রে খাদ্য ব্যবসার সাথে জড়িত খাদ্যকর্মীর গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রয়েছে খাদ্য সংশ্লিষ্ট বিপত্তি নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে। মানুষের জীবনে মৌলিক চাহিদাসমূহ যথা- অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, ও চিকিৎসার মধ্যে প্রথম প্রয়োজনীয় হচ্ছে খাদ্য। বাকি সবগুলোর সাথে আপস করা গেলেও খাদ্য ছাড়া বেঁচে থাকাটাই অসম্ভব। জন্মলগ্ন থেকেই একটি শিশুর প্রাথমিক চাহিদা থাকে খাদ্য যা তার বেড়ে উঠার জন্য অপরিহার্য। আর সেই খাদ্য যদি নিরাপদ ও পুষ্টিসমৃদ্ধ না হয়, তাহলে শিশুটির স্বাভাবিক বৃদ্ধি যেমন ব্যাহত হয়, তেমনি তাঁর বিকাশ ঘটে না। শিশুটি তখন জাতির কাছে মানবসম্পদে পরিণত না হয়ে বোঝায় পরিণত হয়। অর্থাৎ ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, তথা রাষ্ট্রীয় উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতার সাথে খাদ্যের নিরাপদতা জড়িয়ে আছে ওতপ্রোতভাবে। এক কথায় বলা যায়, একটি সুস্থ সবল জাতি গঠনের পূর্বশর্ত হলো জনগণের খাদ্য নিরাপত্তা ও সুষম পুষ্টি নিশ্চিত করে নিরাপদ খাদ্য প্রাপ্তি। বিষয়টি গুরুত্ব অনুধাবন করে বাংলাদেশের আপামর মানুষের জীবন ও স¦াস্থ্য সুরক্ষায় ভেজাল ও দূষণমুক্ত নিরাপদ খাদ্য প্রাপ্তির সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত করণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর যুগোপযোগী, বিচক্ষণ ও দূরদর্শী সিদ্ধান্তে চঁৎব ঋড়ড়ফ ঙৎফরহধহপব,১৯৫৯ রহিত করে যুগান্তকারী নিরাপদ খাদ্য আইন, ২০১৩ প্রণীত হয়। ১ ফেব্রæয়ারি ২০১৫ থেকে কার্যকর এ আইনের অধীন সরকার ২ ফেব্রæয়ারি ২০১৫ তারিখে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ একটি কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা করে। শুধু তাই নয়, বিগত দশ বছরের ক্রমবর্ধমান উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রেখে বাংলাদেশকে একটি শিক্ষিত ও মেধাসম্পন্ন জাতি উপহার দেয়ার লক্ষ্যে বর্তমান সরকার নির্বাচনি বিশেষ অঙ্গীকার ও   পুষ্টিসমৃদ্ধ ও নিরাপদ খাদ্যের নিশ্চয়তাকে সবিশেষ গুরুত্ব প্রদান করেছে। উপরোক্ত  প্রেক্ষাপটে আমরা বলতে পারি দেশের খাদ্য শৃঙ্খলের বিভিন্ন ধাপে বিশেষ করে খাদ্য উৎপাদন হতে খাবার টেবিল পর্যন্ত খাদ্যকে জনগণের জন্য নিরাপদ করা খুবই জরুরি। এক্ষেত্রে নিরাপদ খাদ্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করণে খাদ্য উৎপাদন, আমদানি, প্রক্রিয়াকরণ, মজুদ, সরবরাহ, বিপণন ও বিক্রয় সংশ্লিষ্ট প্রত্যেক পর্যায়ে সমস্যাবলী এবং চ্যালেঞ্জসমূহ চিহ্নিত করে উত্তোরণের জন্য যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। দেশে মানুষের জন্য খাদ্য নিরাপদতার পাশাপাশি নিরাপদ খাদ্য সংস্থার মাধ্যমে এসডিজির অভীষ্টসমুহ অর্জনে পর্যাপ্ত বিনিয়োগ, দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনশক্তি নিয়োগ, বিএফএস এর কার্যক্ষেত্র সম্প্র্রসারণ, ক্ষমতা বৃদ্ধি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে খাদ্য শৃঙ্খলের নিরাপদতার মান উন্নয়ন, তদারকি আইনের প্রয়োগের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ পরামর্শ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রয়োগ এবং সর্বোপরি আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্ব গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করবে।


জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আজীবন লালিত স্বপ্ন ছিল এদেশের গণমানুষের কল্যাণ নিশ্চিত করা। তাঁর এই স্বপ্নকে বাস্তব করার নিমিত্ত বর্তমান সরকার নিরাপদ খাদ্য   কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা করেছে। ফলশ্রæতিতে সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের উন্নয়নশীল দেশ ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন এবং ২০৪১ সালে উন্নতদেশ হিসেবে বাংলাদেশ আত্মপ্রকাশ করবে এবং দেশের সকল মানুষের পুষ্টিসম্মত নিরাপদ খাদ্য প্রাপ্তি নিশ্চিত হবে- এ প্রত্যাশা সকলের।


খাদ্য অনিরাপদ হওয়ার কারণসমূহ
* খাদ্যে ক্ষতিকর অনুজীব ও মাত্রাতিরিক্ত কোনো দূষক, টক্সিনের উপস্থিতিতে;
* খাদ্যে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক বা বালাইনাশকের অবশিষ্টাংশ এবং পশু বা মৎস্য রোগের ওষুধের অবশিষ্টাংশ থাকলে;
* খাদ্যে মাত্রাতিরিক্ত খাদ্য সংযোজন দ্রব্য এবং প্রক্রিয়াকরণ সহায়ক দ্রব্য মিশ্রিত হলে;
* অননুমোদিত খাদ্য সংস্পর্শক মোড়কে বা আধারে খাদ্য রাখলে;
* খাদ্যে এলার্জি সৃষ্টিকারী উপাদানের উপস্থিতিতে।


খাদ্য বিপত্তি যেমন অণুজীব ঘটিত, ভৌত, রাসায়নিক অথবা এলার্জি সৃষ্টিকারী বা অসহিষ্ণু প্র্রতিক্রিয়া সৃষ্টিকারী খাদ্য বিপত্তি মাঠ থেকে পাত পর্যন্ত খাদ্য শৃঙ্খলের  যেকোনো পর্যায়ে ঘটতে পারে। খাদ্য শৃঙ্খলের এমন কোনো পর্যায় নেই যেখানে জৈব বিপত্তি তথা ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি নেই। তাছাড়া যে কোনো পর্যায়ে ইস্ট, মোল্ড ও ভাইরাস ও আসতে পারে। রাসায়নিক খাদ্য বিপত্তি ইচ্ছাকৃৃত এবং অনিচ্ছাকৃতভাবে খাদ্য শৃঙ্খলে যুক্ত হতে পারে। অনিচ্ছাকৃত বিপত্তির মধ্যে আছে বালাইনাশক, আগাছানাশক, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজে ব্যবহৃত রাসায়নিক দ্রব্য ইত্যাদি। আর ইচ্ছাকৃত বিপত্তিতে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের অননুমতি খাদ্য সংযোজন দ্রব্য যেমন : খাদ্য সংরক্ষণকারী রাসায়নিক দ্রব্য, রঞ্জকদ্রব্য, সুগন্ধিদ্রব্য ইত্যাদি। খাদ্য বিপত্তি প্রাকৃতিকভাবে ও আসতে পারে যেমন, এলার্জি সৃষ্টিকারী বা অসহিষ্ণু প্রতিক্রিয়া সৃষ্টিকারী খাদ্যদ্রব্য, বায়োটক্সিন এবং হিস্টামিন যা বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদ, প্রাণী ও অণুজীব থেকে আসতে পারে। ভৌত বিপত্তির মধ্যে ভাঙ্গাকাচ, ভাঙ্গা লোহার টুকরা, প্লাস্টিকের টুকরা ইত্যাদি খাদ্যশৃঙ্খলের যে কোনো পর্যায়ে আসতে পারে। বিভিন্ন বিপত্তি থেকে খাদ্যকে রক্ষা করে জীবন ও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থাপনার কোনো বিকল্প নেই। নিরাপদ খাদ্য আইন ২০১৩ অনুসারে, নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থাপনা পদ্ধিতি (Food Safety Managment System) বলতে নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্য উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ, প্রস্তুতকরণ, ও বিপণনে উৎকৃষ্ট পদ্ধতির (Good Agricultural Practices, Good  Manufacturing Practices, Good Hygienic  Practices) অনুশীলনসহ গ্রহণযোগ্য ব্যবস্থা, বিপত্তি বিশ্লেষণ (Hazard Analysis), সংকটকালীন জরুরি নিরাপত্তা সাড়া (Food Safety Emergency Response), অবশিষ্টাংশ নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি (Residual Control System) ও খাদ্যের অনিরাপদতার উৎস নিরীক্ষা পদ্ধতি (Food Safety Auditing System) এবং সংশ্লিষ্ট বিষয় অনুশীলন, এতদসংক্রান্ত বিদ্যমান আইনে নির্ধারিত মানদণ্ড ও বাধ্যবাধকতা প্রতিপালন নিশ্চিতকল্পে খাদ্য ব্যবসা পরিচালনার জন্য অনুমোদিত নির্দেশনায় (Approved   Guidelines or Directives)  বিদ্যমান।


নিরাপদ খাদ্য খেয়ে সুস্থ সুখী জীবন গড়ি। আমাদের সচেতনতাই পারবে অনিরাপদ খাদ্য গ্রহণ পরিহার করতে ও নিরাপদ খাদ্য গ্রহণে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে।

সদস্য (খাদ্য শিল্প), বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, মোবাইল : ০১৭৩২২৫২২২৯, ই-মেইল : maalim07@yahoo.com

 


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon